ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সম্পর্কে জানুন

আজ ছিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু-এর ওফাত দিবস

এইচএফ ডেস্ক: মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা এবং বয়স্কদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নবীদের পর উম্মতকুলে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সর্বোচ্চ বলেই বিবেচিত হয়। আর সেই সাহাবিদের মধ্যে যাঁর নাম অগ্রগণ্য, তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি ছিলেন একাধারে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্বশুর, হিজরতের সঙ্গী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বাল্য নাম আবদুল্লাহ ও ডাকনাম আবু বকর। সিদ্দিক হচ্ছে তাঁর উপাধি। মিরাজের ঘটনাকে সর্বপ্রথম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন বলেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এই উপাধিতে ভূষিত করেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রত্যক্ষ সঙ্গী, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মতের মাঝে সেতুবন্ধন রচনাকারী, কোরআনের নির্দেশ পালনে তিনি ছিলেন উন্মুখ। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মুসলিম বিশ্বের শাসনকার্য পরিচালনা করেন বলে মুসলিম ইতিহাসে তাদের বলা হয় খোলাফায়ে রাশেদিন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ছিলেন খোলাফায়ে রাশীদুন (অর্থাৎ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত) এর একজন খলীফা। ৬৩৪ খৃষ্টাব্দের ২৩ আগস্ট মোতাবেক ১৩ হিজরির ২২ জমাদিউস সানি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ৬২ বছর বয়সে মহামান্য এই সাহাবি পরলোক গমন করেন। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর ওফাত দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশের বনু তাইম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের মাত্র দুই বছরের কিছু বেশী সময় পর হযরত আবু বকর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুর্ন নাম আবু বকর আস সিদ্দিক আব্দুল্লাহ ইবন আবী কুহাফা উছমান আত তাইমী আল কুরাইশী এবং ডাক নাম আবদুল্লাহ। তার বাবা উসমানের কুনিয়া ছিল আবু কুহাফা। এজন্য আবু বকরকে আবদুল্লাহ ইবন আবী কুহাফাও বলা হয়ে থাকে। ইসলামী জীবনচরিতে তার নাম আবু বকর সিদ্দিকী বলা হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নবুয়্যত লাভের পর বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আবু বকরই সর্বপ্রত্থম ইসলাম গ্রহন করেন। জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি ইসলামের বিধিবিধান অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। ইসলামের সূচনা পূর্ব থেকে আমৃত্যু তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছায়ার মত অনুসরন করতেন এবং নবীজীও ইসলামের জন্য নিজের যথা সর্বস্ব কুরবানী দিয়েছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি বাণী তিনি বিনা যুক্তিতে সত্য বলে মেনে নিতেন তাই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আস-সিদ্দীক উপাধিটি দিয়েছিলেন। তাঁর অন্য উপাধি ছিল আতিক বা আতিকুল্লাহ।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও সত্যনিষ্ঠ। সত্য ও ন্যায়ের ঝাণ্ডা পৃথিবীর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর যথাসর্বস্ব ত্যাগের মহিমা বিরল। প্রথম জীবনে কুরাইশদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তার জ্ঞান, মেধা, বুদ্ধি এবং সৎ চরিত্রের জন্য সবাই তাকে শ্রদ্ধা করত। তা ছাড়া মানুষের দুঃখ-দুর্দশায়, সহায়-সম্বলহীনতায় এবং দুস্থদের সাহায্যার্থে তিনি ছিলেন আত্মনিবেদিত। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সব সময়ই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। বদরের যুদ্ধে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু সরাসরি অংশ নেন এবং নবীজীর খেদমতে প্রতি মুহুর্তে নিজেকে নিয়োজিত করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, 'আমার উম্মতের মাঝে আবু বকরই বেশি দয়ালু।' নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 'বন্ধুত্ব ও সাহায্য আবু বকরই আমাকে বেশি করেছিলেন। ইহজগতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই করতাম।' তিনি আরো বলেন : দুনিয়ায় এমন কোনো ব্যক্তির ওপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়নি, যে পয়গম্বরদের পর হজরত আবু বকর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ (রূহুল বয়ান)।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু-এর অবদান মহাপ্রলয়ের আগ পর্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। ইসলামের প্রতি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু-এর অপরিসীম অবদানের জন্য তাঁকে 'ইসলামের ত্রাণকর্তা' বলা হয়। এ অবদানের স্বীকৃতির ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'দুনিয়াতে আমি প্রত্যেক মানুষের এহসানের পরিপূর্ণ বদলা আদায় করেছি কিন্তু সিদ্দিকে আকবরের ত্যাগের প্রতিদান আদায় করতে পারিনি। হাশরের ময়দানে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাঁকে ওই প্রতিদান দান করবেন।' খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, 'আমি যত দিন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের নির্দেশিত পথে চলি, তত দিন তোমরা আমাকে অনুসরণ করবে এবং আমাকে সাহায্য করবে। আর ভুল পথে চললে তোমরা আমাকে সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দেবে। তোমাদের মধ্যে যারা দুর্বল, তাদের হক আদায় না করা পর্যন্ত তারা আমার কাছে সবল ও শক্তিশালী। আর যারা সবল, তাদের কাছ থেকে হকদারের হক আদায় না করা পর্যন্ত তারা আমার কাছে দুর্বল।' সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু প্রদত্ত এ ভাষণ দুনিয়ার সর্বকালের শাসকদের জন্য অনুপম আদর্শ।

Comments

  1. অনেক কিছু জানতে পারলাম

    ReplyDelete

Post a Comment