রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানুন

রজবুল মোরাজ্জব
এইচএফ ডেস্ক: ''আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।"

অর্থঃ  "হে আল্লাহ আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন।" 

রজব ও শা'বান মাসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।

এটা বরকতের মাস। এ মাসের ২৭ তারিখ রাত্রে হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মেরাজ হয়েছে। আর এ সময়ই নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ জন্যই এ রাত্রিতে কাজায়ে উমরী এবং নফল নামাজ আদায় করার মধ্যে বহু ছাওয়াব রয়েছে।

🌿 ছয় বছরের গুনাহ মাফের আমল!

রজবের প্রথম তিনটি রোযার ফযীলতের কথা কি বলব!  

হযরত  সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে  বর্ণিত রয়েছে: মদীনার তাজদার, নবীদের ছরদার, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

“রজবের  প্রথম  দিনের রোযা তিন বছরের কাফ্ফারা, আর  দ্বিতীয় দিনের রোযা দুই বছরের এবং তৃতীয় দিনের রোযা এক বছরের কাফ্ফারা; অতঃপর প্রতি দিনের রোযা এক মাসের কাফ্ফারা স্বরূপ।” (আল জামিউস সগীর, পৃষ্ঠা-৩১১, হাদিস নং-৫০৫১।  দালায়িলে শাহরে রজব, লিল হাল্লাল, পৃষ্ঠা-৭)

🌿 রজব মাসে অন্তত একটি রোযা রাখার ফযিলতঃ

হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ তাআলার  রাসুল, রাসুলে মকবুল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “জান্নাতে একটি নহর  আছে যেটাকে রজব বলা হয়, সেটার পানি দুধের চেয়ে অধিক  সাদা, আর মধুর চেয়েও বেশী মিষ্টি। যে কেউ রজব মাসে একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তাআলা  তাকে এ নহর থেকে পানি পান করাবেন।” (শুআবুল  ঈমান,  খন্ড-৩,  পৃষ্ঠা-৩৬৮,  হাদিস  নং-৩৮০০) 

🌿 রজবকে সম্মান করার বরকতময় ঘটনা!

হযরত সায়্যিদুনা ঈসা আলাইহিস সালাম এর যুগের ঘটনা। এক ব্যক্তি অনেকদিন ধরে এক নারীর প্রতি প্রেমাসক্ত  ছিল। একবার সে তার প্রেমিকাকে নাগালে পেয়ে গেল। লোকজনের অবস্থা দেখে সে অনুমান করল যে, তারা চাঁদ দেখছে। সে ঐ নারীকে জিজ্ঞাসা করল: লোকেরা কোন মাসের চাঁদ দেখছে? সে  বললো: “রজবের”। লোকটি অথচ কাফির ছিল, কিন্তু  রজব শরীফের নাম শুনে সেটার সম্মানার্থে তৎক্ষণাৎ আলাদা হয়ে গেল এবং ব্যভিচার থেকে বিরত রইল। হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ এর প্রতি নির্দেশ হল; আমার অমুক বন্দার সাক্ষাতে যাও! তিনি তাই  করলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ও তার কাছে  নিজের আগমনের কারণ বললেন। এটা শুনতেই তার হৃদয় ইসলামের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল। সে সাথে সাথে ঈমান আনল। (আনিসুল ওয়ায়িযীন, পৃষ্ঠা-১৭৭)

🌿 রজব মাসে ইবাদতকারীর ফযিলত!

বসরা শহরে এক নেককার  মহিলা বাস করতেন।  যখন তাঁর মৃত্যু সময় ঘনিয়ে আসল, তখন তিনি  সন্তানকে অছিয়ত করলেন, আমাকে ঐ কাপড় পরিয়ে দাফন করবে, যা পরে আমি রজব মাসে  ইবাদত  করতাম।অতঃপর একদিন তাঁর ইন্তিকাল হয়ে গেল। তাঁর ছেলে তাঁকে  অন্য কাপড়ের  কাফন পরিয়ে দাফন করে দিল।কবরস্থান থেকে সে যখন ঘরে ফিরে আসল তখন এই অলৌকিক ঘটনা দেখে অবাক হয়ে গেল যে, সে যে কাফনের কাপড় দিয়ে তার মাকে দাফন করেছিল ঐ কাফনের কাপড় তার ঘরে পড়ে আছে, আর অছিয়তকৃত কাপড়টি আপন জায়গা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এমনসময় অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসল! “তোমার কাফন ফেরত  নাও! আমি তাঁর জন্য ঐ কাফনের ব্যবস্থা  করেছি, (যার জন্য সে অছিয়ত করেছিল) যে ব্যক্তি  রজবের রোযা রাখে, আমি তাকে তার কবরে কষ্টে  রাখিনা।” (নুযহাতুল মাযালিছ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০৮) আল্লাহ  তাআলার  রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তার সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

🌿 বীজ বপনের মাস!

হযরত  সায়্যিদুনা আল্লামা  সাফ্ফুরী রাহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:  

‘রজবুল মুরাজ্জাব হচ্ছে  বীজ বপনের মাস, শাবানুল মুআ’য্যম  হচ্ছে তাতে পানি দেয়ার  মাস, আর রমযানুল মোবারক হচ্ছে ফসল কাটার  মাস। কাজেই যে পবিত্র  রজব মাসে ইবাদতের বীজ বপন করে না, আর  সম্মানিত শাবান মাসে  চোখের পানি দিয়ে সেচ দেয়  না, সে রমযানুল মোবারক মাসের রহমতরূপী ফসল  কিভাবে কাটবে?’ তিনি আরো বলেন: ‘পবিত্র রজব মাস শরীরকে, সম্মানিত শাবান মাস হৃদয়কে, আর রমযানুল মোবারক রূহকে পবিত্র করে।’ (নুযহাতুল  মাযালিশ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০৯)

আজ রজবের প্রথম রাত, পাচঁটি বরকতময় রাতের একটি!

🌿 হযরত সায়্যিদুন আবু  উমামা রউফুর রহীম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:  

“পাচঁটি রাত এমন রয়েছে যাতে দোআ ফিরিয়ে দেয়া  হয়  না।  (১) রজবের প্রথম রাত, (২) শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত), (৩) বৃহস্পতিবার  ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত  রাত),  (৪) ঈদুল ফিতরের রাত, (৫) ঈদুল আযহার রাত। 

(তারিখে দামেশ্ক লি ইবনে আসাকির,  খন্ড-১০,  পৃষ্ঠা-৪০৮)

🌿  আগামী ২২ মার্চ বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমআর রাতটি রজবের প্রথম জুমআর রাত, যা লাইলাতুল রাগাঈব নামে পরিচিত। এই রাতে প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক প্রিয় নবিজির আব্বাজান হযরত আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর কাছ থেকে মা হযরত আমিনা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার কাছে স্থানান্তরিত হয়েছিলো। তাই নিঃসন্দেহে বলতে পারি এই রাতটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাত। বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমআর রাত ও সর্বোপরি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাত হিসেবে লাইতুল রাগাঈব  রাতটি শবে মেরাজ, শবে বরাতে ও শবে কদরের চাইতেও মর্যাদাপূর্ণ রাত, কারণ প্রিয় নবিজি  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমণের কারণেই আমরা জুমআর রাত, শবে মেরাজ, শবে বরাত ও শবে কদরের মতো রাত পেয়েছি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে রজব, শাবান ও রমযান মাসকে সম্মান করে নিজের জীবনকে সম্মানিত করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

Comments