আজ মহিমান্বিত ভাগ্য রজনী "পবিত্র শবে বরাত"
এইচএফ ডেস্ক: শবে বরাত অর্থ, পরিচয় ও নামকরণ: আরবী ‘শাবান’ (شعبان) শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হল ‘শা’বানাত (شعبانات) ও শা’আ-বীন (شعابين), শা’বানিয়্যীন। আর শা’বানিয়্যীন অর্থ: বিক্ষিপ্ততা ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া। ইমাম রাফে (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর উক্তি উপস্থাপন করে বলেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শাবান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।
আরবী ১২ মাসের ৮ম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি পবিত্র কোরআনের ভাষায়- “লাইলাতুম মুবারাকা” বা বরকতময় রজনী, আর হাদীস শরীফের ভাষায়- “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” বা শাবানের মধ্য রজনী। তাফসীরের ভাষায়- “লাইলাতুছ্ ছাক” বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি, “লাইলাতুন নাজাহ” তথা মুক্তি রজনী। আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে “শবে বরাত” বলে আমরা জানি যা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত। শব অর্থ: রাত এবং বরাত: অর্থ ভাগ্য, পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ ইত্যাদি। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে।
পবিত্র কোরআন ও প্রসিদ্ধ তাফসীরের আলোকে শবে বরাত
আল্লাহ এরশাদ করেন,
حم-والكتاب المبين- إنا أنزلناه فى ليلة مباركةإنا كنا منذرين- فيها يفرق كل أمر حكيم–
অর্থ: হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ। (সূরা দুখান, আয়াত নং ১-৪)
এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য মুফাস্সিরগণের মতামতঃ
১.মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন,
(قوله ليلة النصف من شعبان) هو قول عكرمة وطائفة ووجه بامور منها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء اليلة المباركة وليلة البرأة وليلة الرحمة وليلة الصك ومنها فضل العبادة فيها –
অর্থ : ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ইত্যাদি। (তাফসীরে ছাভী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০) খণ্ড খণ্ড
২.তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে,
ان انزلناه فى ليلة مباركة هى ليلة القدر او ليلة النصف من شعبان نزل فيها من ام الكتاب من السماء السابعة الى السماء الدنيا انا كنا منذرين-
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায়)
৩.তাফসীরে তাবারী শরীফে রয়েছে,
عن عكرمة فى قول الله تبارك وتعالى (فيها يفرق كل أمر حكيم) قال: فى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد, ولا ينقص منهم أحد.
অর্থ : আল্লাহ তায়ালার বাণী এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না। (তাফসীরে তাবারী শরীফ, পৃষ্ঠা ২২, খন্ড ১০)
৪. প্রসিদ্ধ তাফসীরে কুরতুবী রয়েছে,
ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-
অর্থ: ইমাম কুরতুবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে- (ক). লাইলাতুম মুবারাকা, (খ). লাইলাতুল বারাআত, (গ). লাইলাতুছ্ ছাক (ঘ). লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬ পৃষ্ঠা-১২৬)
৫.তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنهما أن الله يقضى الأقضية فى ليلة النصف من شعبان, ويسلمها إلى أربابها فى ليلة القدر-
অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন । (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)
এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নাম-
(১).তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪। (২).তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০। (৩).তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪। (৪).তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০। (৫).তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২। (৬).তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২। (৭). তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (৮). তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২। (১০). তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (১১). তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯। (১২). তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩। (১৩). তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬। (১৪). তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩। (১৫). তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪। (১৬). তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬। (১৭).তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭। (১৮). তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২। (১৯). তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬। (২০). তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১। (২১). তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০। (২২). তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৩). তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৪). তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৫). তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০, (২৬). তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০। (২৭). তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১।



Comments
Post a Comment