আজ মুসলমানদের প্রকাশ‍্য বিজয়ের দিন "ঐতিহাসিক বদর দিবস"


এইচএফ ডেস্ক : হিজরতের ২য় বৎসর ১৭ রমাদ্বান সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। সেদিন নিরস্ত্র মাত্র ৩১৩ জন মুসলমানের হাতে অস্ত্রবলে সুসজ্জিত কাফের বাহিনীর গর্বিত কপালে পরাজয়ের চিহ্ন অঙ্কিত হয়। কুফর-শিরকের মর্মমূলে আঘাত করে বিস্ময়কর বিজয়ের মাধ্যমে উড্ডীন হয় তাওহিদের পতাকা।

মক্কায় কাফেরদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন মানবতার মুক্তির দিশারী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিরা। সেখানেও মুসলমানদের নিরাপদে থাকতে দেয়নি হিংস্র কাফেরেরা। পরিস্থিতির ঘূর্ণিপাকে তৈরি হয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। এ যুুদ্ধে লোকবল ও অস্ত্রবলে পরিপূর্ণ ছিল কাফের বাহিনী। যুদ্ধজয়ের স্বপ্নীল বাসনায় ছিল কিছুটা বেপরোয়া। অপরদিকে মুষ্টিমেয় মুসলমানদের পর্যাপ্ত হাতিয়ার ছিল না। লোকবল ছিল নামেমাত্র। তবে তাদের ছিল ঈমানি শক্তি। সত্য ও সততার পথে লড়ে যাওয়ার দুর্বার হিম্মত। ফলে পৃথিবী সেদিন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছে, আবুু জাহেলের যে সৈন্যবাহিনী গুটিকয়েক মুসলমানকে হত্যার উদগ্র নেশায় ছুটে এসেছিল, যুদ্ধ শুরুর পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসতও তারা পায়নি।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সশরীরে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ পাকের সঙ্গে তার আত্মার যোগাযোগ ছিল নিরবচ্ছিন্ন। মুসলমানরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রান্তরের এক কোণে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি তৈরি করেছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার সেখানে গিয়ে পরম দয়াময়ের শরণাপন্ন হচ্ছিলেন। একবার আবুু বকর (রা.) ওই ঝুপড়িতে প্রবেশ করে দেখেন প্রাণের সবটুকু আবেগ মিশিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতর স্বরে বলে যাচ্ছেন, হে আমার প্রভু! এই মুষ্টিমেয় সত্যের সৈনিকদল যদি আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে দুনিয়াতে তোমার নামের মহিমা প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। হে আল্লাহ! আমার সঙ্গে তুমি যে ওয়াদা করেছিলে আজ তা পূর্ণ কর।

আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতির কোনো ব্যতিক্রম নেই। মুসলমানদের সাহায্যের জন্য তিনি একদল ফেরেশতা পাঠিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতেই যুদ্ধের চিত্র পাল্টে গেল। নিরস্ত্র মুসলমানদের হাতেই বড় বড় কাফের সরদাররা নিহত হতে লাগল। কাফেরদের দলনেতা খোদ আবুু জাহেল নির্মমভাবে ধরাশায়ী হয় নওজোয়ান দুই ভাইয়ের হাতে। এ বদর যুদ্ধেই মক্কার কাফেরদের ঔদ্ধত্য অহঙ্কার চিরদিনের জন্য মরুর বালুতে ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়।

সুরা আল ইমরানে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, বদর প্রান্তরে সংখ্যায় স্বল্পতা সত্ত্বেও আল্লাহপাক তোমাদেরকেই বিজয়ী করেছেন। যদি তোমরা দ্বীনের পতাকাকে বুলন্দ করার জন্য আজো সততা ও এখলাস নিয়ে ময়দানে পা রাখ তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে বিপুল সাহায্য সহযোগিতায় ভরপুর করে তুলবেন। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।

আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন করা এবং জীবনের প্রতিটি পর্বকে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অনুযায়ী পরিচালিত করা। বরকতময় মাহে রমাদ্বান তাকওয়া তৈরির এক অনবদ্য সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগালে আমাদের জীবনে আশাতীত এক পরিবর্তন সাধিত হবে ইনশাআল্লাহ।

এইচএফ/এমএসটি

Comments